এম,এ,মুছা বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতাঃ বেলকুচিতে অপরিকল্পিত ভাবে শিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় ব্যাপক আকারে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। শিল্প বর্জ্যে প্রসেস মিলের কেমিক্যাল পানি মিশ্রিত বর্জ্যে যমুনা নদী সহ বিভিন্ন নদনদীর পানি দূষিত হয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় সূত্রে বেলকুচিতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টি প্রসেস কারখানা রয়েছে।
কিন্তু বেসরকারী এক পরিসংখ্যানে জানাযায় বৈধ ও অবৈধভাবে বেলকুচিতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টি প্রসেস কারখানা গড়ে উঠেছে। কিছু সংখ্যক কারখানা অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে মাত্র ১টি অনুমোদন প্রাপ্ত মিলের বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন পদ্ধতির ব্যাখ্যা সরকারী কাগজপত্রে উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) ছাড়া প্রসেস মিলের অনুমোদন দেয়া হয়না। অপরিকল্পিত ভাবে প্রসেস মিল গড়ে ওঠায় ফলে প্রসেস মিলের কেমিক্যাল মিশ্রিত বর্জ্যে পদার্থ খাল বিল নদীতে ওয়াবধার খালে ফেলে পানি দূষিত করছে। মরছে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী।
অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার বর্জ্যে নির্গত দুর্গন্ধময় বিষাক্ত বর্জ্যে আবাসিক এলাকার ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। এতে পুরো বেলকুচিতে জনজীবন হুমকির সম্মুখীন। চালা ওয়াবদা বাঁধের স্থানীয় কিছু মানুষের সাথে আলাপ চারিতায় জানায়যায়, ওয়াবধা বাঁধের পাশে বেশ কিছু প্রসেস মিল গড়ে উঠেছে এবং এ সমস্ত প্রসেস মিলের পানি ওয়াদার খালে ফেলছে। ফলে এখানে রাস্তা চলাচলের সময় পর্যাপ্ত দূর্গন্ধ ছড়ায়। প্রসেস মিলের দূষিত পানি ভূগর্ভে মিশে এখন এই এলাকার টিওবয়েল চাপলে রঙিন পানি বের হয়। পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এই এলাকার মানুষ পানি ব্যবহারের ফলে হাত পায়ে ঘাঁ পচড়া,চুলকানী সহ নানাবিধ চর্ম রোগ দেখা দিচ্ছে।
অপরিকল্পিত ভাবে তাঁত শিল্প প্রসেস কারখানা গড়ে ওঠায় এখানকার শিল্প এলাকা বা আবাসিক এলাকা চিহিৃত হচ্ছে না। ফলে আবাসিক এলাকায় কারখানা গড়ে ওঠায় ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া বিঘ্ন ঘটায় এবং জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।
এসব কারখানা থেকে নির্গত দুর্গন্ধময় বর্জ্যের কারণে বেলকুচি পৌর এলাকাসহ এখানকার বিভিন্ন নদনদী, খালবিল, ডোবা নালার পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের বিভিন্ন রকমের রোগ দেখা দিয়েছে। অপরদিকে এখানকার নদী ও খালবিলে এবং বিভিন্ন জলাশয়ে দূষিত পানি ছড়িয়ে পড়ায় নদীর মাছ, জমির ফসল, এমনকি গাছপালা পর্যন্ত মরে যাচ্ছে। এলাকাবাসীর বহু প্রতিবাদের মুখেও প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে। বেলকুচির প্রসেস মিলের দূষিত পানি ভূগর্ভে মিশ্রিত পানি পান করছে স্থানীয়রা আর জন্ম হচ্ছে বিকোলাঙ্গ প্রতিবন্ধী শিশু। বেলকুচিতে দিন দিন বেড়েই চলছে প্রতিবন্ধী মানুষের সংখ্যা।
একটি সূত্র জানায়, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে শিল্প ও প্রসেস মিলের মালিকদের অবৈধ চুক্তির ভিত্তিতে তারা ইটিপি প্লান না করেই পানি শোধন ছাড়াই শিল্প প্রসেস মিলের বর্জ্য নদীতে ফেলছে ফলে নদীর পানি দূষিতসহ পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।
বেলকুচির চালা গ্রামের প্রসেস মিল মালিক আব্দুল মান্নান জানান, আমরা ক্ষুদ্র প্রসেস ব্যবসায়ী আমাদের পক্ষে ইটিপি প্লান করা সম্ভব নয়। যদি সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয় তাহলেই (ইটিপি) প্লান করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওলিজ্জামান জানান, প্রসেস মিলের মালিকদের ইতিমধ্যে অবহিত করা হয়েছে। বিষয়টি পরিবেশের সাথে সংশ্লিষ্ট আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করছি। পরিবেশ অধিদপ্তর এর ব্যবস্থা নিবে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ দিতে পারে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে।
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী তবিবর রহমান জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের গাফিলতির ফলেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। তারা ব্যবস্থা নিলে হয়তো এমটি হতো না।
বেলকুচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লের মেডিকেল অফিসার ডাঃ সাখাওয়াত হোসেন জানান, প্রসেস মিলের দূষিত পানি ব্যবহার করার ফলে নানা প্রকার ঘাঁ পচড়া সহ চর্ম রোগ হচ্ছে বলে জানান।
বেলকুচি তাঁত শিল্প এলাকা, প্রসেস মিল তাঁত শিল্পের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং তাঁত শিল্পের জন্য প্রসেস মিলের প্রয়োজন রয়েছে। তবে নির্ধারিত কোন স্থানে ইটিপি প্লান করে প্রসেস মিল পরিচালনা করলে হয়তো এ সমস্যার উত্তোরণ ঘটবে বলে মনে করেন অভিজ্ঞজনেরা।
Facebook Comments