আবহাওয়ার বিশেষ পরিস্থিতিতে ‘লা নিনা’ পর্ব শুরু হয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরের ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি অঞ্চলের পানির গড় উষ্ণতা ত্রিশ বছরের মধ্যে এখন ১ দশমিক ১ ডিগ্রি কম। সাধারণত ওই অঞ্চলের পানির গড় তাপমাত্রা দশমিক ৮ ডিগ্রি কমে গেলেই ‘লা নিনা’ শুরু হয়। ‘লা নিনা’র বছরে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব অংশে স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা শীতল হয়ে যায়। ফলে ওই অংশে বেড়ে যায় শীতের প্রকোপ।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আবহাওয়া ও পানিচক্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে একটি অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ বছর ঝড়-বৃষ্টি বেশি দেখা গেছে। সুপার-ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টিজনিত বন্যা, সাগরে জোয়ারজনিত বন্যা হয়েছে। অক্টোবর-নভেম্বর সাইক্লোন-মৌসুম। বর্তমানে সাগরে লঘুচাপ চলছে। যদিও মৌসুম সক্রিয় থাকায় হয়তো ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হবে না। কিন্তু আসন্ন শীতল মৌসুমে শীতের তীব্রতা এবং বৃষ্টির আশঙ্কা উভয়ই আছে। এটা আবহাওয়াকে কতটা পরিবর্তন করবে সে ব্যাপারে সতর্কতার সঙ্গে অপেক্ষার বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে যত বড় বন্যা হয়েছে প্রত্যেকটিই লা নিনার বছরে দেখা গেছে। এ বছরও অঞ্চলভেদে ৪-৬ বার বন্যার কবলে পড়েছে দেশ। এর শুরু হয়েছে গত এপ্রিলের শেষে আম্পানের মাধ্যমে। তারা আরও বলছেন, সামনে শীতকাল। সাধারণত এই ঋতুতে বৃষ্টি হলে শীতের প্রকোপ বাড়ে। প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশের সঙ্গে দেশগুলোতে বৃষ্টি ও ঝড় বেড়ে গেলে এর ‘টেলি-কানেকশন’ হিসেবে আসন্ন শীতে বাংলাদেশেও তা বেড়ে যেতে পারে। যদিও ‘আইওডি’ এ ক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু ইতোমধ্যে ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থা (আইএমডি) উত্তর-পূর্ব এবং মধ্যভারতে আগামী তিন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য আবহাওয়া সংস্থাগুলো ভারতের উল্লিখিত অঞ্চলের পাশাপাশি বাংলাদেশের কিছু অংশ এবং মিয়ানমারেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। এমনটি হলে শীতের প্রকোপও বেড়ে যেতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। যদিও বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এখন পর্যন্ত শীতের সঙ্গে লা নিনার সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। এর সঙ্গে বৃষ্টি-বন্যা বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে।
সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া সংস্থা (বিওএম) এবং যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া সংস্থা (এনওএএ) আলাদাভাবে লা নিনার ঘোষণা দিয়েছে। স্পেনিশ শব্দ ‘লা নিনা’ অর্থ হচ্ছে ‘ছোট্ট বালিকা’। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেন সার্ভিসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, লা নিনাকে কখনও কখনও ‘এল ভিজো’ (পুরাতন), ‘এন্টি এলনিনো’ (উষ্ণতার বিপরীত) বা ‘কোল্ড ইভেন্ট’ (শীতল পর্ব) হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রশান্ত মহাসাগরের আবহাওয়ার আরেক পরিস্থিতির নাম ‘এল নিনো’। এর অর্থ হচ্ছে, ছোট্ট বালক। প্রশান্ত মহাসাগরের ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি এলাকার পানির ৩০ বছরের গড় তাপমাত্রার চেয়ে দশমিক ৫ ডিগ্রি বেশি হলে এলনিনো শুরু হয়। এল নিনো বছরে পৃথিবীতে উষ্ণতা বা খরা বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।